ঢাকা , বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন।


আপডেট সময় : ২০২৫-০৯-০৩ ১৭:৩২:৫৬
বাগেরহাটে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। বাগেরহাটে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন।
 
বাগেরহাট প্রতিনিধি।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের কাশিমপুরে ইসরাফিল মুন্সী দিপুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ধর্ষণের চেষ্টা, পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্যে স্থিরচিত্র ধারণ, টাকা দাবি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করার অভিযোগে দায়ের করা মামলাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
 
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে কাশিমপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে কয়েকশত নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা দাবি করেন ইসরাফিল মুন্সী দিপু একজন সৎ, শিক্ষিত ও ভদ্র স্বভাবের মানুষ। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে এবং জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
 
কাশিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমার ঘরের পাশেই দিপুর ঘর আরেক পাশে ওই মেয়ের পরিবার থাকে। মামলায় যে অভিযোগ করা হয়েছে তা কখনো আমার চোখে পড়েনি। দিপুকে ছোটবেলা থেকেই চিনি ও একজন ভদ্র ও নেককার ছেলে। পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। একদিন শুধু শুনেছি ওরা কয়েকটা ডিম বিক্রি করেছে সেই টাকা দেখাবে ওদের। এটাই ছিল তার সাথে আমার শেষ কথাবার্তা। মেয়েটা যে এতদূর যাবে তা ভাবতেও পারিনি।
 
অন্যদিকে মামলার বাদী পাপীয়া বেগম বলেন, তাদের কাছে মোবাইলে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তিনি দাবি করেন স্থানীয়রা জানেন আমার মেয়ের সঙ্গে দিপুর সম্পর্ক ছিল।
 
প্রতিবেশী আল আমিন বলেন, ইসরাফিল আহমেদ দিপুকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। সে একজন ধর্মভীরু মানুষ, নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। এমন কোনো অনৈতিক কাজ সে করতে পারে এটা আমাদের বিশ্বাস হয় না। কারণ সে বিবাহিত এবং তার মাত্র দশ মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। একজন দায়িত্বশীল স্বামী ও পিতা হিসেবে এ ধরনের কাজে জড়ানো তার চরিত্রের সঙ্গে মোটেও যায় না।
 
তিনি আরও বলেন, যে মেয়ের নাম বলা হচ্ছে সেই সাদিয়া আগে থেকেই সৌদি আরব প্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং সেই সূত্রে সে ঐ যুবকের কাছ থেকে প্রচুর টাকা-পয়সা নিয়েছিল বলে আমরা শুনেছি। কিন্তু পরে সাদিয়া যখন ওই যুবককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দেয় তখন ক্ষোভে ওই যুবক মেয়েটির ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিওগুলো ছড়িয়ে দেয়। মূলত টাকার কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। এর দায় অন্য কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক ও পরিকল্পিত।
 
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়ার সহপাঠী মাহফুজা খাতুন বলেন, আমি আর সাদিয়া একসাথে পড়াশোনা করি। সাদিয়া আমার সাথে সব কিছু শেয়ার করে কিন্তু কখনো দিপু ভাইয়ের সাথে সম্পর্কের কথা বলেনি। আমি দিপু ভাইকে ওর সাথে কথা বলতে দেখিনি। বরং সাদিয়া এক বিদেশি ছেলের সাথে সম্পর্ক করত এবং তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। পরে সেই ছেলেকে ব্লক করলে সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। তাহলে মামলা তো সেই ছেলের নামে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু জমিজমার দ্বন্দ্বের কারণে দিপু ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে।
 
আরেক সহপাঠী সানজিদা খাতুন বলেন, আমি কখনো সাদিয়াকে দিপু ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বা তাকে বিরক্ত করতে দেখিনি। সাদিয়া আগে অন্য এক ছেলের সাথে কথা বলতো। দিপু ভাইয়ের সাথে তার কোনো সম্পর্কই ছিল না। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

ইসরাফিল মুন্সী দিপু বলেন, সাদিয়া আমাদের আপন চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। তাদের সাথে আমাদের জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই বিরোধের কারণেই আমার নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ সাদিয়া বিদেশে থাকা এক ছেলের সাথে সম্পর্ক করত। তাদের মধ্যকার বিষয়টা আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে আমি ২৪ দিন জেলহাজতে থেকেছি। আমার দাবি হচ্ছে যদি সত্যিই আমার সাথে তার কোনো সম্পর্ক থাকে তবে প্রমাণ দিক আইন যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেবো।
 
দিপুর বড় ভাই ইসমাইল শেখ অভিযোগ করে বলেন, জমিজমা নিয়ে আমাদের সাথে দ্বন্দ্ব থাকায় শহিদুল ইসলাম টুলু বিশ্বাস নিজের মেয়েকে দিয়ে এ মিথ্যা মামলা করেছে। সে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না দিলে হত্যার হুমকি দিয়েছে। টুলু আগে জঙ্গলে ডাকাতি করত, এখন ছদ্মবেশে থাকে যে নাকি রাজমিস্ত্রি। অথচ সে অত্যন্ত হিংস্র প্রকৃতির মানুষ। আমার ভাই সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
 
এলাকাবাসীর দাবি আমরা দিপুকে ছোটবেলা থেকে চিনি। সে কখনো এমন কাজ করতে পারে না। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। আজ একজন নির্দোষ ছেলেকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। যদি সঠিক তদন্ত না হয় তাহলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবে। প্রকৃত অপরাধীকে রক্ষা করার জন্য নিরপরাধ কাউকে ফাঁসানো হলে তা সমাজের জন্য ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। তাই ইসরাফিল মুন্সী দিপুকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে সত্য উদঘাটন করে তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ